Mohendra Nath Dutta (মহেন্দ্রনাথ দত্ত)

BENGALI INDEX

মনীষী মহেন্দ্রনাথ দত্ত জীবন তপস্যা ও ধর্ম || স্বামী বিবেকানন্দের চিঠিপত্রে অনুজ মহেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে মন্তব্য || মহেন্দ্র দর্শনের রূপরেখা || মহেন্দ্রদর্শনে-স্পন্দনবাদ ও স্নায়ুতত্ত্ব || জীববিজ্ঞানী মহেন্দ্রনাথ দত্ত || শিক্ষাপ্রসঙ্গে মহেন্দ্র চিন্তা || পুণ্যদর্শন মহেন্দ্রনাথ দত্তের গ্রন্থাবলী প্রসঙ্গে গুণীজনের অভিমত || Sf ¢L J a¡l p¡bÑLa¡ || cnÑe || মনীষী মহেন্দ্রনাথ দত্তের গ্রন্থাবলী || প্রাপ্তিস্থান

ENGLISH INDEX

Introduction || Social Thinker || Nerve theory & Meditation || Creation from the Unmanifested or Primal Engery || Natural Religion || Thoughts on religion || Homocentric Civilization || Eastern socialistic state || Rights Of Mankind || Social thoughts || Booklist

SRI RAMAKRISHNA

SRI RAMAKRISHNA- SWAMI VIVEKANANDA
and
BROTHER MOHENDRANATH DUTTA

MOHENDRANATH DUTTA
SWAMI VIVEKANANDA

Mohendra Nath Dutta
Mohendra Nath Dutta

 

মনীষী মহেন্দ্রনাথ দত্ত জীবন তপস্যা ও ধর্ম

মহেন্দ্রনাথ দত্তের সংক্ষিপ্ত জীবন কথা

দেবকুমার মুখোপাধ্যায়

      মহেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের (SWAMI VIVEKANANDA) দ্বিতীয় ভাই। তিনি জন্মগ্রহণ করেন বাংলা ১২৭৫ সালের ২৯শে শ্রাবণ (ইং ১৮৬৯ সালের ১লা আগস্ট) পৈতৃক বাড়ী অধুনা খ্যাত ‘মহেন্দ্র তপক্ষেত্র’ ৩নং গৌরমোহন মূখার্জী ষ্ট্রীট, কলকাতা-৬। তাঁর পিতা বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন বিদ্যালয়ের নীচের ক্লাসের ছাত্র। তাঁর স্কুল জীবনেই তিনি কেশবচন্দ্র সেন, শ্রীমৎ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী এবং ব্রাহ্ম সমাজের সংস্পর্শে এসেছিলেন। কলকাতার মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে তিনি ১৮৮৮ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষা এবং ১৮৯১ সালে জেনারেল এ্যাসেমব্লি (বর্তমান স্কটিশচার্চ কলেজ) থেকে এফ,এ পরীক্ষায় পাশ করেন। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি শ্রীরামকৃষ্ণদেব (SRI RAMAKRISHNA) এবং তাঁর অনুরাগীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA), স্বামী অভেদানন্দ, স্বামী সারদানন্দ, মহাকবি গিরিশ ঘোষের সঙ্গে থেকে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সাহিত্য, বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়ন ও আলোচনা করতেন। ফাদার লাফোঁ ও ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রভৃতি মহাপুরুষের সংস্পর্শেও তিনি আসেন।


এফ,এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঈশ্বরনিষ্ঠ তপশ্চর্যাকে অভ্যাস করবার জন্য হরিদ্বার, হৃষিকেশ ইত্যাদি তীর্থভূমিতে মহেন্দ্রনাথ দত্ত ঘুরে বেড়িয়েছিলেন।

 

১৮৯৬ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডন যাত্রা করেন। লন্ডনে মহেন্দ্রনাথ দত্ত ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশুনা আর গভীর গবেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।

 

১৮৯৭ থেকে ১৯০২ সাল অবধি প্রায় নিঃসঙ্গ পর্যটক হিসাবে তিনি ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশীর ভাগ সময়ে পায়ে হেঁটে কিংবা ঘোড়ার পিঠে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। তাঁর এই ভ্রমণ শুরু হয় জিব্রাল্টার থেকে এবং একে একে মরক্কো, মাল্টা, আলেকজান্দ্রিয়া এবং কায়রোয় ভ্রমণ করেন।

 

তারপর এলেন আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন জেরুজালেম, বেরুইট, দামাস্কাস ইত্যাদি পরিভ্রমণ করতে। সেখান থেকে কনস্টানটিনোপলে।

 

পরে আর্মেনিয়া থেকে তিনি ককেসাস যান। কাস্পিয়ান সমুদ্র উপকূল ও জর্জিয়ার টিফলিস শহরে বেশ কিছুদিন থাকাকালে তিনি কাস্পিয়ান সাগরের তীরে অবস্থিত বহু পুরোনো শহরে এসে পৌঁছলেন। বাকু থেকে তিনি ঘুরে বেড়ালেন পার্সিয়ায় মাসিদ এবং খোরাসান, ইসপাহান শহরে বিভিন্ন স্থানে।

 

এরপর তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ ও পরিদর্শন করে করাচীতে আসেন। করাচীতে এসে তাঁর এই দীর্ঘ বিদেশ ভ্রমণ শেষ হয়।

 

মহেন্দ্রনাথ প্রণীত Language and Grammar & Rhetoric গ্রন্থ থেকে জানতে পারা যায়, তিনি পৃথিবীর বহু ভাষা জানতেন এবং ভাষাতত্ত্বে গভীর জ্ঞান ছিল তাঁর। সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞান, কাব্য, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, অর্থনীতি, স্থাপত্য, সমাজ-বিজ্ঞান, জীববিদ্যা, দর্শন, পুরাতত্ত্ব, নীতিবিজ্ঞান, নন্দনতত্ত্ব, শ্রীরামকৃষ্ণ (SRI RAMAKRISHNA) ও শ্রীরামকৃষ্ণ পার্ষদদের জীবনী, ইতিহাস ও অনুধ্যান প্রভৃতি বহু বিষয়ে বহু গ্রন্থ তিনি প্রণয়ন করেছেন।

 

মহেন্দ্রনাথের ছিল বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশংসনীয় দখল এবং তাঁর ছিল সর্বধর্মের প্রতি এক গভীর উদারতা। তিনি সব কিছুকে এক আধ্যাত্মিক চিন্তায় রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রায়ই তিনি তাঁর অনুরাগীদের বলতেন-“ভিন্নবোধ বলতে কিছু নেই। এক শক্তি থেকেই ভিন্ন রকমের অভিন্ন যুক্তিবোধের সৃষ্টি হয়।”

 

১৯৫৬ সালে মহাষ্টমীর দিনে তিনি সমাধিস্থ হলেন।

 

অবশেষে বিজয়া দশমীর দিন (১৫ই অক্টোবর ১৯৫৬) তিনি পার্থিব শরীর ছেড়ে মহাসমাধিতে মগ্ন হন।

Mohendra Nath Dutta
Mohendra Nath Dutta

স্বামী বিবেকানন্দের (SWAMI VIVEKANANDA) চিঠিপত্রে অনুজ মহেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে মন্তব্য

paÉhËa h­¾c¡f¡dÉ¡u

 

যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকা থেকে স্বামী সারদানন্দকে ২০মে ১৮৯৪ তারিখে লেখা একখানি চিঠিতে স্বামীজী লিখেছেন, “তুমি কি বলিতে চাও আমি একজনের বন্ধনের সহায়তা করিব? কি আহাম্মক তুমি! যদি আমার ভাই মহিন বিবাহ করে আমি তাহার সহিত কোন সংস্রব রাখিব না। এ বিষয়ে আমি স্থির সংকল্প। এখন বিদায়।” (পত্রাবলী, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ১৩৫)

 

আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন পথের পথিক মনে হলেও স্বামীজী মহেন্দ্রানাথের জীবনপথের প্রতি স্নেহপূর্ণ এবং তীক্ষ্মদৃষ্টি রেখেছিলেন। লুসার্ন থেকে ২৩শে আগস্ট ১৮৯৬ তারিখে স্বামীজী একখানি চিঠিতে তাঁর বন্ধু মিঃ স্টাডিকে জানাচ্ছেন, “মহিম ও ফক্সের সঙ্গে এর পর যখন দেখা হবে, দয়া করে তাদের আমার ভালবাসা জানিও।” (পত্রাবলী, উদ্বোধন কার্যালয়, ১৯৮০, পৃষ্ঠা ৪৮৩।)

৬৩ নং সেন্ট জর্জিয়া রোড, লন্ডন থেকে স্বামীজী বিদেশিনী শিষ্যা মিসেস বুলকে লেখা ৫ই জুন, ১৮৯৬ তারিখের চিঠিতে মহেন্দ্রানাথের ভবিষ্যৎ জীবন সম্বন্ধে স্বামীজী জানাচ্ছেন-“I do not like any one whom I love to become a lawyer, although my father was one. . . . What my nation wants is pluck and scientific genius, so I want Mohin to be an electrician. Even if he fails in life, still I will have the satisfaction that he strove to become great and really useful to his country. . . . . I want him to be daring, bold and struggle to cut a new path for himself and his nation. . .” (Complete Works of Swami Vivekananda Vol.6, Page 363, Second reprint of the subsidized Edition, March 1989, Advita Ashram.)

 

এই চিঠিতে আমরা জানতে পারি যে স্বামীজ চেয়েছিলেন, মহেন্দ্রনাথ ওকালতি না পড়ে একজন ইলেক্ট্রিসিয়ান হন। আরও জানতে পারি তিনি জানাচ্ছেন, “যাকে তিনি ভালবাসেন, তার উকীল হওয়া তিনি পছন্দ করেন না।”

 

পরর্বতী জীবনে যদিও মহেন্দ্রনাথ Electrician হননি, কিন্তু দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পৃথিবীর নানা স্থানে অকুতোভয়ে ভ্রমন করেছেন,পর্যবেক্ষণ করেছেন বিশ্ব-প্রকৃতি আর মানব সমাজকে। এই সম্বন্ধেও স্বামীজীর আর একখানি চিঠি পাই। প্যারিস থেকে ইংরাজী ১৪ই আগস্ট ১৯০০ সালে বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA) জন ফক্সকে ইংরাজীতে লেখা এক চিঠিতে জানাচ্ছেন-

Kindly write Mohin that he has my blessings in whatever he does. And what he is doing now surely much better than lawyering, etc. . . Only as my health is failing and I do not expect to live long, Mohin must see his way to take care of mother and family. I may pass away any moment. I am quite proud of now.” (Complete Works of Swami Vivekananda Vol.8, Page 531-532, First reprint of the subsidized Edition, January 1989.)

 

দেহত্যাগের দুবছর আগে লেখা এই চিঠির আদেশ মহেন্দ্রনাথ পালন করেছিলেন গৌরমোহন মুখার্জী ষ্ট্রীটে ফিরে এসে রত্নগর্ভা মাতা ভুবনেশ্বরী দেবীর এবং স্বামীজীর আত্মীয়-স্বজনদের তত্ত্বাবধানের জন্য। অবশ্য মা এবং পরিবারের লোকেদের দেখাশুনা করা ছাড়াও মানব সমাজ, বিজ্ঞানশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ের উপর জাতির নব পথপ্রর্দশনের চিন্তারাজি গ্রথিত করেছেন প্রায় একশখানি গ্রন্থে।

 

প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করি সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করলেও বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA) পারিবারিক দায়িত্ব অবহেলা করতে চাননি। পারিবারিক দুরবস্থা তাঁকে ব্যথিত করত। শ্রীপ্রমদাদাস মিত্র মহাশয়কে ৪ঠা জুলাই ১৮৮৯ তারিখে একটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন, “আমার মাতা ও দুইটি ভ্রাতা কলিকাতায় থাকে। আমি জেষ্ঠ, মধ্যমটি ফার্ষ্ট আর্টস পড়িতেছে আর একটি ছোট, ইহাদের অবস্থা পূর্বে অনেক ভাল ছিল। কিন্তু আমার পিতার মৃত্যু পর্য্যন্ত বড়ই দুঃস্থ, এমন কি কখনও কখনও উপবাসে দিন যায়। তাহার উপর জ্ঞাতিরা দুর্বল দেখিয়া পৈতৃক বাসভূমি হইতে তাড়াইয়া দিয়াছিল, হাইকোর্টে মোকদ্দমা করিয়া যদিও সেই পৈতৃক বাটীর অংশ পাইয়াছেন, কিন্তু সর্বস্বান্ত হইয়াছেন- যে প্রকার মোকদ্দমার দস্তুর। কখন কখন কলিকাতার নিকট থাকিলে তাহাদের দুরবস্থা দেখিয়া রজোগুণের প্রাবল্যে অহংকারের বিকার স্বরূপ কার্য্যকারী বাসনার উদয় হয়। সেই সময় মনের মধ্যে ঘোর যুদ্ধ বাধে, তাহাতেই লিখিয়াছিলাম , মনের অবস্থা বড়ই ভয়ঙ্কর। এবার তাহাদের মামলা শেষ হইয়াছে। কিছুদিন কলিকাতায় থাকিয়া তাহাদের সমস্ত মিটাইয়া এদেশ হইতে চিরদিনের মত বিদায় হইতে পারি, আপনি আশীর্ব্বাদ করুন।”

 

পরমহংসদেবের ভাবশিষ্য হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA) গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করে দেশে দেশে ফিরে প্রায় বিশ বছর ধরে “ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে” কতই না ভ্রমণ করেছেন। নবজাগরণের কল্যাণপ্রদ মহাভব ও শুভধর্মের যুগান্তকারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কর্মজীবনের শেষপ্রান্তে এসেও ভুলতে পারেননি- গর্ভধারিণী মাতৃদেবী ভুবনেশ্বরীকে, সহোদর ভাই মহেন্দ্রনাথ ও ভূপেন্দ্রনাথকে, আর নিজ পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের। সেই জন্যই বোধহয় ১৯০০ সালের ২৫শে আগস্ট তারিখে কন্যাসম শিষ্যা সিস্টার নিবেদিতাকে লিখলেন, “আমি এইবার সম্পূর্ণ অবসর নিতে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু এখন দেখছি মায়ের ইচ্ছা আমি আমার আত্মীয়দের জন্য কিছু করি। ভাল, বিশ বছর আগে যাত্যাগ করেছিলুম, আনন্দের সঙ্গে তা ঘাড়ে নিলাম।”

 

মহেন্দ্র দর্শনের রূপরেখা

দেবকুমার মুখোপাধ্যায়

 

স্বামী বিবেকানন্দের (SWAMI VIVEKANANDA) কথিত বেদান্তবাণী সম্পূর্ণতা লাভ করেছে শ্রীমহেন্দ্রনাথ দত্তের নিরলস অধ্যয়ন ও গবেষণা, বিশ্বপরিভ্রমণ, পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষ্ণে এবং তা থেকে আহৃত অভিজ্ঞতালবদ্ধ জ্ঞানে যা তিনি উপস্থাপন করেছেন বিশ্ববাসীর কাছে। তিনি ছিলেন সর্ববিদ্যা বিশারদ। বিদ্যা বা ব্রহ্মজ্ঞান এবং অবিদ্যা, অর্থাৎ জাগতিক বিদ্যার ভেদ রেখা মুছে দিয়ে ঘোষণা করেছেন, “যে কোন ব্যক্তিই নিজ ঈশ্বরত্ব অনুভব করলে মহান হতে পারেন।”

 

তিনি প্রণাম করেছেন সেই দেবতাকে- যিনি অগ্নিতে, বায়ুতে, জলে, যিনি সমগ্র বিশ্বসৃষ্টিতে, যিনি বনস্পতিতে, লতাগুল্মে নিজেকে প্রকাশ করেছেন। স্রষ্ঠা সৃষ্টিতে রূপান্তরিত হচ্ছেন! সৃষ্টি ব্যতিরেকে পৃথক স্রষ্ঠার কোন অস্তিত্ব নেই। তার লিখিত সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান- অভিজ্ঞতালবদ্ধ ও যুক্তিভিত্তিক। কাল্পনিক সত্তার অস্তিত্ব মেনে তিনি জগৎ ব্যাখ্যার বৃথা চেষ্টা করেননি। জনৈক অনুগামীকে বলেছেন- “ঈশ্বর কি জান?- জমাট বাঁধা এক মহাশক্তি যা থেকে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হচ্ছে, যাতে স্থিতি লাভ করেছে ও লয় হচ্ছে।”

 

আমরা অনেকেই “একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি”- এই বাণী শুনেছি, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করিনি। মহেন্দ্রনাথ তাঁর বিজ্ঞানের পুস্তকগুলিতে ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে প্রমাণ করে দেখিয়ে গেলেন কিভাবে এক অখণ্ড শক্তি ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বজগৎ ও জীবজগৎ রূপান্তরিত হচ্ছে। বেদান্তদর্শনের বিজ্ঞানভিত্তিক এহেন ব্যাখ্যা অন্য কোথাও নেই। জড় বা প্রাণহীন বলে তিনি কিছু মানতেন না,- প্রাণ সর্বব্যাপী। ছোট একটি উদাহরণ তিনি দিচ্ছেন “দেখ, মরা মাছ খেয়েও আমরা শক্তি লাভ করছি, যদি মৃত মাছে শক্তি বা প্রাণ না থাকে তাহলে আমরা কিভাবে ওই মৃত মাছ থেকে শক্তি পাচ্ছি? প্রত্যেক জিনিসই প্রাণপূর্ণ। আমাদের বোঝবার বা দেখবার অসম্পূর্ণতায় আমরা কোনটাকে বলছি ‘জড়’, আর কোনটাকে বলছি ‘চেতন’। কিন্তু চেতনতা সর্বত্রই বিরাজমান।” আর একটি উদাহরণ তিনি দিয়েছেন- প্রাণ শক্তি হ্রাসের ফলে আমাদের দেহে ব্যাধির সৃষ্টি হয়, কিন্তু ঔষধ সেবনে আমাদের রোগের উপশম হয়, কেন? আপাত দৃষ্টিতে ঔষধ জড়। কিন্তু আমরা দেখছি ঐ জড়ই আমাদের প্রাণ শক্তি দিচ্ছে। তাহলে ঐ জড়ের ভিতর আত্মগোপন করে আছে প্রাণশক্তি।

 

অবিদ্যার ভিতরেও তিনি সেই মহানের সন্ধান পেয়েছেন; সেই জন্যই তাঁর লিখিত পুস্তকাদিতে কিভাবে সমাজ উন্নয়ন করা যায়, কিভাবে জাতি তাঁর সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধন ও উন্নতি লাভ করতে পারে তাঁর নির্দেশ দিয়েছেন অতি আধুনিক বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, জগৎ থেকে দূরে সরে গিয়ে ব্রহ্মবিদ্যার অনুশীলন তিনি করেননি। পতিতা নারীর উন্নতি প্রকল্পে তিনি বলেছেন সাময়িক পদস্খলনের জন্য এদের সমাজ থেকে বিতাড়িত করা ঠিক নয়, এদের উপযুক্ত শিক্ষা, অন্ন বস্ত্রের সংস্থান আর স্নেহ মমতা দিলে এরাই মহীয়সী মাতৃমূর্তিতে রূপান্তরিত হবে। তিনি পাপ স্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, ‘পাপ’ নয় ‘ভুল’। ‘ভুল’ মানুষ করে এবং তা সংশোধন করলেই হয় আবার মন্যুষত্বের পূর্ণ বিকাশ। যাদের আমরা পাপী বলে চিহ্নিত করি আমাদেরকে বলেছেন তাদেরকে নিজ নিজ দেবত্ব স্মরণ করিয়ে দাও শুধু ‘পাপ’ ‘পাপ’ বলে দূর করে দিও না। সুন্দর একটি উদাহরন তিনি দিচ্ছেন- কাগজে এক ফোঁটা কালির দাগ পড়লে, সেই কালির বিন্দুকে কালি দিয়ে মুছতে গেলে সমস্ত সাদা কাগজ কালিমা লিপ্ত হয়। ডাকাত-গুণ্ডাদের সাজা দিয়ে সুধু ক’বছর জেল খাটার ব্যবস্থা না করে এদের তিনি সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তাঁর সমস্ত গ্রন্থবলীতে সেই একত্বের নির্দেশ। অজন্তা-ইলোরা-কোনারকের তথাকথিত অশালীন মূর্তিগুলি সম্বন্ধে বলেছেন- এগুলি মানব সৃষ্টি বা বিশ্বসৃষ্টিকে সুন্দরভাবে প্রতিফলিত করেছে। শিল্পীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলে এর ভেতর এক মহান সত্য ও সৌন্দর্য আবিষ্কার করা যায়।

 

ভক্তির আতিশয্যে জড়তাকে প্রশ্রয়কে তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন-“দেখ প্রভুর কি মহিমা!- করে দেশটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে।” তিনি বলেছেন আমাদের দেশে এক নতুন বৃত্তি জন্মলাভ করেছে- যারা নিজেদের ত্যাগ বৈরাগ্যের ধারক ও বাহক বলে জাহির করেন; এদের বৃত্তি বেশ লাভজনক।

 

ধর্মের নামে বিশাল স্মৃ্তি সৌধ নির্মাণ করে কোন কোন স্বার্থান্বেষী ঐ সমস্ত কর্মবিমুখ escapist, religion mongers এবং renunciation mongers- ত্যাগ বৈরাগ্যের ভূয়া বাণী শুনিয়ে সাধারণ অল্প বুদ্ধি মানুষকে মোহাচ্ছন্ন করে তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থে নিজেদের সুখময় কর্মহীন জীবন ভোগ করছে :

It is a mere insult & mockery to raise a huge memorial structure when the nation is starving. This is a monument not of devotion but a monument of mockery. It is a criminal waste of toiler’s fund . . . . The nation will not tolerate such abuse of prestige and trust.

 

এই সমস্ত মন্দিরগুলি সম্বন্ধে তিনি বলেছেন যে এদের অধিগ্রহন করে Public Trust Body-তে সমর্পণ করা হউক এবং এই সমস্ত আয় জাতীয় শিক্ষা খাতে ব্যয় করা হউক।

 

একটা নতুন কথা তাঁর দর্শনে আমরা পেয়েছি-‘ত্যাগ’ মনস্তাত্বিক বিচারে অসম্ভব। ত্যাগ হল negative idea, এটা সম্ভব হতে পারে না। একটাকে না ধরলে অন্যটা ছাড়া যায় না। পক্ষান্তরে বিবেক বুদ্ধি দিয়ে জাগতিক বস্তু সমূহ সুসামঞ্জস্য ভাবে অপরের ক্ষতি না করে ভোগ করলে মানসিক অবনতি হয় না, বরং মানসিক উন্নতিই সাধিত হয়।

 

আত্মপ্ররচনা বা আত্মহীনতাকে তিনি বলেছেন সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক:-

We are not to glorify the God at expense of depressing the ego, but we are to glorify the ego by self-assertion. . . .to stop the self-assertion and the expansion of the Ego. . . is to force a man to commit mental suicide. Many a poor mortal has either turned out to be an atheist or lunatic through this gloomy aspect. . .

 

তিনি বলেছেন আত্মবিকাশই ধর্মের চরম রক্ষক। তিনি যথার্থ মুক্ত পুরুষ যিনি নিজ আত্মাকে প্রত্যেক বস্তু, প্রত্যেক ব্যক্তিতে অবস্থান করতে দেখেন এরা প্রত্যেক বস্তুকে নিজ আত্মার মত প্রিয় বোধ করেন এবং সর্বদা নিজেকে জগতের মঙ্গল চিন্তায় ও কর্মে নিয়োজিত করেন।

 

মহেন্দ্রনাথ লিখিত দর্শন-সাহিত্য-বিজ্ঞানসমুদ্রে অবগাহন করলে সংকীর্ণতা রূপ কালিমা ধৌত হয়ে আমাদের মন শূচিশুভ্র হয়।

 

মহেন্দ্রদর্শনে-স্পন্দনবাদ ও স্নায়ুতত্ত্ব

মহেন্দ্রনাথ দত্ত

 

‘অব্যক্ত’ বা ‘অখণ্ড’ শক্তি মানুষের বোধের অতীত। অখণ্ড শক্তির বিষয় আমরা চিন্তা করতে পারি না, কিন্তু তাহার সহিত একীভূত হইয়া যাইতে পারি। অব্যক্ত বা অখণ্ড শক্তিকে আমরা তিন শ্রেনীতে বিভক্ত করিয়া থাকি, কারণ মানুষের চিত্তে এই রূপ তিন অবস্থা হয়। অবশ্য, ইহা আমাদের কল্পনা মাত্র। অখণ্ড শক্তির নিম্নস্তর হইল, শক্তির সাম্য অবস্থা- Equilibrium State of Energy. সাম্য অবস্থার নিম্নস্তর হইল, চঞ্চল অবস্থা- Active State of Energy. চঞ্চল অবস্থা হইতে পার্থক্য দেখাইবার জন্য সাম্য অবস্থা বলা হয়: যেন চঞ্চল অবস্থা ধীরে ধীরে উপশান্ত হইয়া অখণ্ডভাব আসিবার উপক্রম হইতেছে। অখণ্ড ও খণ্ড এই দুই ভাগের মধ্যবর্তী অবস্থাকে সাম্য অবস্থা বলা হয়। সাম্য অবস্থা পর্যন্ত এক প্রকার চিন্তা শক্তি থাকে। তাহার পর চিন্তাশক্তি বিলুপ্ত হয়। ‘চিন্তা’ হইল বিভিন্ন কম্পন বা প্রকম্পনের পরিমান, দ্বিধা বিভক্ত বা নানান খণ্ডে বিভক্ত, এবং দেশ-কাল-নিমিত্তের অন্তর্ভুক্ত। এইজন্য, চিন্তা সেখানে চলিতে পারে না।

 

শক্তির চঞ্চল বা সক্রিও অবস্থা হইতেই শক্তির বিষয় আমাদের কিঞ্চিত বোধগম্য হয়। এই সক্রিও শক্তি বহু ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়, যেন এক-একটি যতি বা রেখা বা সূত্র প্রধাবিত হইতেছে। শক্তি যখন সক্রিও বা চঞ্চল ভাবে থাকে, তখন ইহার প্রধাবমান অবস্থা হইতে স্পন্দন উদ্ভুত হয়। এই স্পন্দন হইতে ‘গুণ’ উদ্ভুত হয় ; এবং গুণ দুই-এর অধিক বিন্দুতে বা ক্ষেত্রে সমাহিত হইলেই ‘রূপ’ বা ‘অবয়ব’ বা ‘পরমাণু’ সৃষ্টি হয়, উহাকে রূপ বা অবয়বের অবস্থা বা পরমাণুর অবস্থা বলা হয়। একরৈখিক একমাত্রিক পরমাণু আমাদের চিন্তারও অতীত। দুই রেখা যুক্ত বা দুই মাত্রাবিশিষ্ঠ পরমাণুও আমাদের চিন্তার অতীত। তিন রেখা বা তিন মাত্রাযুক্ত পরমাণুই আমদের চিন্তার গোচর, কিন্তু আমরা এই দেখিতে পাই না। এইজন্যপরমাণুকে ‘চিৎ-জড়-গ্রন্থি’ বলা হয়। ইহা একভাবে হইল ‘চিৎ’, অপর ভাবে হইল ‘জড়’। অবয়ব আছে, এইজন্য ‘জড়’ বলা হইল ; কিন্তু অবয়ব দেখিতে পাওয়া যায় না, কেবল চিন্তাশক্তির অধীন, এইজন্য ইহাকে বলা হইল ‘চিৎ’।

 

এইরূপে সক্রিও শক্তি বহু ভাগে বিভক্ত হইয়া স্পন্দিত হওয়ায় পরমাণু উৎপন্ন হয়। পরমাণু হইল a bit of Energy, enveloped with Energy and is propelled by Energy, অর্থাৎ পরমাণু- শক্তির এক কণা, শক্তির দ্বারা আবরিত এবং শক্তির দ্বারা প্রধাবিত। অর্থাৎ ‘জড়’ ও ‘চেতনা’ একই বস্তু, কেবল প্রক্রিয়া ও বিকাশের তারতম্যে ভিন্ন বলিয়া মনে হয়। ইউরোপীয় দার্শনিক মতে ‘জড়’ এক বস্তু এবং ‘চেতন’ বা ‘শক্তি’ অপর এক বস্তু। কিন্তু এ স্থলে দেখা যাইতেছে যে, ‘চেতন’ বা ‘শক্তি’ ও ‘জড়’ একেরই নামান্তর, কোনো প্রভেদ নেই। একটি হইল পরিদৃশ্যমান, অপরটি হইল অতীন্দ্রিয়গ্রাহ্য; এই মাত্র প্রভেদ।

 

প্রকম্পনই হইল সৃষ্টির আদি কারণ।

 

প্রত্যেক পরমাণুর অবিরত কম্পন বা প্রকম্পন হইতেছে। ‘দেহ’ হইল প্রকম্পমান পরমাণুর স্রোত; উহা বহির্দেশ হইতে বহু ছিদ্র দিয়া এক কেন্দ্রে আগমন করিতেছে এবং বহু ছিদ্র দিয়া অপসারিত হইতেছে। প্রত্যেক পরমাণু নতুন ভাবে আসিতেছে এবং পুরাতন সকল পরমাণু পরিবর্তিত হইতেছে। অনবরত এই পরিবর্তনের মধ্যে যাহাই স্থিতি, তাহাকেই ‘দেহ’ বলিয়া থাকি।

 

পরমাণুপুঞ্জ একত্রিত হইয়া এক রেখায় অবস্থান করিলে তাহকে ‘স্নায়ু’ বলা হয়। খড়ের আঁটি যেমন একত্রীভূত করে রাখা হয়, স্নায়ুপুঞ্জ ঠিক সেইরূপ অবস্থান করে। স্নায়ুপুঞ্জকে স্তরে স্তরে বিভক্ত করা যাইতে পারে- যেমন স্থূল-স্নায়ু, মহাকরণ-স্নায়ু প্রভৃতি অনেক প্রকার। স্থূল-স্নায়ু অতি সূক্ষ্ম স্নায়ু হইতে ক্রমে ক্রমে ঘনীভূত হইয়া উদ্ভুত হয়।

 

প্রত্যেক স্নায়ু এক প্রকার উদ্দেশ্য বা এক এক প্রকার ক্রিয়ার জন্য গুণবিশিষ্ঠ হইয়াছে। দুই গুণ বা দুই ক্রিয়া এক স্নায়ুতে হতে পারে না।

 

স্নায়ু হল অন্তঃশূন্য। অন্তঃশূন্য হইলেও কিন্তু শূন্য স্থানেও পরমাণুসমূহের প্রকম্পন বা ধ্বংসন হওয়ার জন্য উহাদিগের অন্তর্নিহিত শক্তি বিকাশ পায়। এক বা বহুস্নায়ু হইতে এইরূপ শক্তিরেখা বহির্গত বা সঞ্চালিত হওয়ায়। একটি স্রোত বা প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এই স্রোত বা প্রবাহ হল ‘মন’।

 

ভারতীয় দর্শনশাস্ত্রমতে ‘মন’ ছয়টি স্তরে বিভক্ত। ইহাদিগকে ‘লোক’ বলা হয়। ইহাদের মধ্যে প্রথম পাঁচটি, যথা- কামলোক, রূপলোক, ভাবলোক, জ্ঞানলোক ও আনন্দলোক। সর্ব্বোচ্চ স্তর হইল ‘অনুত্তর সম্যক সম্বোধি’ বা ‘পূর্ণ পরাজ্ঞান’- এর অবস্থা।

 

আমরা মনকে যে প্রকার স্নায়ু- স্থূল, সূক্ষ্ম, অতিসূক্ষ্ম, কারণ, মহাকারণ প্রভৃতির ভিতর দিয়া প্রাধাবিত করিতে সমর্থ হই, অব্যক্ত বা অখণ্ড শক্তিকেও ঠিক সেই রূপ অ্যাখ্যা দিয়া থাকি বা বর্ণনা করিয়া থাকি। সেইজন্য, যাহা অখণ্ড, তাহাও পরিশেষে খণ্ড বা জড়বৎ বলিয়া পরিদৃশ্যমান হয়; আর এইজন্য,বিভিন্ন ব্যক্তির চিন্তাধারা ও মনোবৃত্তির মধ্যে এত তারতম্য দৃষ্ট হইয়া থাকে।

 

স্নায়ুর স্পন্দনের অতীত যে কি আছে বা কি অবস্থা, তাহা আমাদের বোধগম্য বা ধারণা হইতে পারে না; কারণ আমাদের সমস্ত জ্ঞান, ইন্দ্রিয়গোচর বা অতীন্দ্রিয় যাহাই হউক না, কোনো না কোনো স্নায়ু-প্রকম্পন দ্বারা উপলব্ধ হয়। যিনি যে পরিমাণে মনকে সূক্ষ্ম স্নায়ুর ভিতর দিয়া প্রধাবিত করিতে পারিবেন বা সূক্ষ্ম স্নায়ু জাগ্রত করিতে পারিবেন, তিনি সেই পরিমাণে বিশাল ভাব উপলব্ধি করিতে পারিবেন। যিনি যে পরিমাণে মনকে স্থূল স্নায়ু দিয়া প্রভাবিত করিবেন স্থূল স্নায়ুতে অবস্থান করিবেন, অর্থাৎ মনকে স্থূল স্নায়ুতে রাখিবেন, তিনি সেই পরিমাণেই বিচ্ছিন্ন ও নিকৃষ্ট ভাবে জগৎ দেখতে থাকিবেন। এই সকল কারণে মনকে ‘উচ্চ’ বা ‘নীচ’ শব্দে বিভক্ত করা হয়।

 

মোট কথা, চেষ্টা বা শক্তি নিয়োগ চলিত কাথায় যাহাকে ‘সাধনা’ বলা হয়, তাঁহার দ্বারা যিনি যত স্নায়ু জীবিত বা সজীব করিতে পারিবেন বা রদ্ধ স্নায়ুমুখসমূহ উদঘাটন করিতে পারিবেন এবং উহাদিগের অভ্যন্তরস্থিত নালীর ভিতর দিয়া অতিসূক্ষ্ম পরমাণুসমূহের সহায়ে শক্তি প্রধাবিত করিতে পারিবেন তাঁহার মনোবৃত্তি বা মনের পরিধি সেই প্রকার হইবে।

 


 

জীববিজ্ঞানী মহেন্দ্রনাথ দত্ত

Xx A¢jue¡bhËñ

 

মনীষী মহেন্দ্রনাথ দত্তের ছিল বিজ্ঞানের প্রতি একটা বিশেষ আকর্ষণ। পুণ্যদর্শন মহেন্দ্রনাথ জীব-বিজ্ঞানের প্রবন্ধ লিখেছিলেন ১৯৪৩ সালে। এইসব গ্রন্থগুলি যেগুলি পড়ে Biologyগ্রন্থ আকারে প্রকাশ হয়েছে, মহেন্দ্রনাথ জীব সৃষ্টির গোড়ার কথা থেকে আরম্ভ করে তার অভিব্যক্তি, অভিযোজন, প্রজনন বিদ্যা, নার্ভ, অস্থি, চর্ম, মস, উদ্ভিদের ক্রম ইত্যাদি নান বিষয়ে বেশ বিশদ ভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর গভীর মনস্তত্ত্ব ও যোগতত্ত্বের ওপর লেখা বেশ প্রাণময় ও প্রাঞ্জল। তাঁর ছিল সজাগ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী সব সময় তিনি তাঁর মনকে রেখেছিলেন সেইখানে যেখানের থেকে সব শক্তির প্রকাশ হয় অর্থাৎ তিনি সব জিনিসকে স্থূল ভাবে নিতেন না। তিনি সূক্ষ্মভাবে সেই মহাজগতিক শক্তির অনুসন্ধান করে গিয়েছেন। তিনি গতানুগতিক ভাবে প্রবন্ধগুলি রচনা করেননি। বস্তুত সম্পূর্ণ ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গীতে জীবজগতের মৌলিক্তত্ত্বগুলি বিশ্লেষণ করে গেছেন। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাঁর মতামত পাশ্চাত্যের জীববিজ্ঞানীদের মতামতের থেকেমৌলিকভাবে বিভিন্ন হয়ে পড়েছে। তবু প্রবন্ধগুলি ভারতীয় যোগশাস্ত্রের এবং মনস্তত্ত্বের ওপর বুনিয়াদ করে রচনা করা হয়েছিল। মহেন্দ্রনাথ তাঁর রচনাগুলিতে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী ত্যাগ না করে বা কুসংস্কার বা পুরোহিত তত্ত্বের দ্বারা অনুপ্রাণিত না হয়ে আলোচনা করেছেন।


সৃষ্টিতত্ত্বের সূচনায় তিনি বলেছেন যে ভারতীয় যোগশাস্ত্র “মন” ও “প্রাণ” এই দুতি জড়দেহের প্রধান সত্তা হিসাবে ধরে। তিনি বলেছেন পূর্বপুরুষের সকল বৈশিষ্ট্য সন্তানগণের মধ্যে আসে প্রাণ ও মন হিসাবে এক সূক্ষ্ম ধারায়, যা সন্তানের সূক্ষ্মভাবের মধ্যে দিয়ে সঞ্চারিত হয়। যেহেতু পূর্বপুরুষের আত্মার সাথে এর ঘনিষ্ঠতা সেইজন্যই “উত্তর পুরুষ”-কে “আত্মজ” বলা হয়। মহেন্দ্রনাথ এই প্রাণকে মহাজাগতিক রশ্মি বা কসিমক রশ্মির অংশ বিশেষ বলেছেন। এই মহাজাগতিক রশ্মি বা মহাশক্তি হচ্ছে ইউনিভারসাল লাইট বা প্রাণ। পিতামাতার মধ্যে যে মহাজাগতিক শক্তি আছে তার মিলিত রূপ হচ্ছে “সন্তান” সেইজন্য সন্তানের মধ্যে পিতামাতার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। পিতার শুক্রাণুর সহিত প্রাণশক্তি বা living force আর তাঁর সাথে অস্থি, মজ্জা, স্নায়ু সব গলিত হয়ে দেহকণা (Body particle) রূপে মাতার শরীরে প্রবেশ করে ; সেখানেও মাতার শরীরের প্রাণশক্তি দেহকণা (Body particle)-এর সহিত যুক্ত হয়ে একটি প্রাণী রূপে জন্মাতে পারে নতুবা “প্রাণী” হওয়া সম্ভব নয়। মহেন্দ্রনাথ বলেছেন সন্তান উৎপাদনের সময় প্রাণের অনুপ্রবেশ হচ্ছে সব চাইতে মক্ষম ঘটনা। এখানে তাই আমরা বলতে পারি “প্রাণ” থেকে “প্রাণী”-র উৎপত্তি।


বর্তমানে প্রজনন বিদ্যার অনেক গবেষণা হয়েছে এবং আমরা জানি ডঃ খোরানা ইত্যাদি অনেকেই এই বিষয়ে গবেষণা করে অনেক জ্ঞানের কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, পিতামাতার যে বৈশিষ্ট্য সন্তানের মধ্য আসে তার কারন কোষের মধ্যেকার নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসের মধ্যে থাকে ক্রোমজোম। এই ক্রোমজোমের মধ্যে জিন বা ডি.এন.এ. বলে পদার্থ থাকে এবং এই জিন বা ডি.এন.এ হল আমাদের বংশগতির ধারক ও বাহক। মহেন্দ্রনাথও সেই একই কথা বলেছেন, তবে আরও বলেছেন যে ওর সাথে প্রাণের সম্পর্ক থাকা দরকার। তাঁর মতে মহাজগতিক রশ্মির ফলে কোষ সৃষ্টি হয় এবং সেই কোষের মধ্যে যে বিভিন্ন প্রকার কম্পন হয় তার ফলেই কোষের বিভিন্ন প্রকৃতি দেখা যায়। স্রী ও পুরুষ প্রকৃতি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে এই কম্পনের বিভিন্নতায়। পৃথিবী থেকেই জীব সৃষ্টির ব্যাপারেও তাঁর চিন্তাধারা খুবই বিজ্ঞানভিত্তিক। হাজার হাজার বছরকে তিনি একটি “কল্প” বলেছেন বহু “কল্প” পার হয়ে তবে পৃথিবী এখন বর্তমান রূপে এসে পৌঁছেছে।


জীব সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর চারপাশে প্রকৃতির যে অবরণ (atmospheric encasements) আছে তা থেকেই পৃথিবীর এই জীব সৃষ্টি। প্রথম মাটিতে মস বা ফার্ণ জাতীয় উদ্ভিদের আবির্ভাব। বর্তমান ধারনায় ঠিক এই কথাই বলা হয় যে পৃথিবীর বুকে প্রথম ছিল জল, সেই জলে উদ্ভিদ তারপরে ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি হল এককোষী প্রাণী।


অভিযোজন সম্বন্ধে মহেন্দ্রনাথ প্রাচ্য ও ভারতীয় ধারনার সাথে নিজের পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে তিনি হাড়গিলা পাখির কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে এই পাখিটি বড় বড় জন্তু জানোয়ারের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গিলে খায় এবং এখানে তিনি বলেছেন যে, গিলে খাওয়া বৈশিষ্ট্যের জন্যই পাখিটির ঠোঁটগুলি খুব বড় বড় ও মুখগহ্বর এত বড় যে গিলে খেতে তার কোন অসুবিধা হয় না। হরিদ্বারে থাকার সময়ে তিনি দেখেছেন যে শীতকালে মানস সরোবর ও তিব্বতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাইগ্রেটারী পাখি এসে সেখানে ছোট ছোট দল বেঁঢে থাকে এদের বৈশিষ্ট্য যে একদল আর একদলের সাথে মিশ্ত না কিংবা স্থানীয় পাখিদের সাথেও তাঁদের কোন মেলামেশা ছিল না। আবার সীতের শেষে তারা ফিরে যায় নিজের ডেরায়। তিনি স্থলচর ও জলচর প্রাণীদের শারীরিক আকৃতি প্রকৃতির মধ্যেও অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করেছিলেন। স্থলচর প্রাণীদের কানে থাকে বড় বড় পাতা। শব্দের কম্পনকে গ্রাহ্য করার জন্য। স্থলে থাকে নানারকম বাধা, তাই সেই বাধাকে অতিক্রম করে শব্দকে অবিকৃত শোনার জন্য দরকার হয় কর্ণকুহরের চারপাশের এই বিস্তৃতিটির। হাতীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যখন তার কোন শব্দ শুনতে চায় তখন তারা কানটিকে সর্বাগ্রে খাড়া করে সেই কম্পপঙ্কে ধরার জন্য। কিন্তু অন্যদিকে জলচর প্রাণীদের যেমন, মাছ দেখা যায় তাদের কানের বিস্তৃতিটি থাকে না, থাকে দুটি মাত্র ছিদ্র। এই সম্বন্ধে তিনি বলেছেন জলের মধ্যে শব্দের কম্পন ব্যাহত হয় না বরং কিছুটা ঘনীভূত হয়। এই পর্যবেক্ষনের স্বপক্ষে তিনি আরেকজনকে নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। দুই বন্ধু জলের তলায় বেশ কিছু দূরে দাঁড়িয়ে যখন একজন কান ঢেকে অপর জনকে শব্দ করে শূনতে বললেন তখন অপর জন বলেছিল, যে সে স্থল অপেক্ষা অনেক বেশি স্পষ্ট ও অবিকৃত শব্দ জলের তলায় শুনতে পেয়েছে। এই থেকেই তাঁর বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা ও মননশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। মন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বললেন, মন হল মানুষের পরিবর্তনশীল সত্তা। বিভিন্ন স্নায়ুকোষের কম্পনের ফলে মনে প্রকৃতি ও গতি নিয়ন্ত্রিত হয়। মন কখনও বর্হিমুখী এবং অন্তর্মুখী হয় আর যখনই এক হয়ে যায় তখনই “অখণ্ড সচ্চিদানন্দে” সত্তার বোধ (Realise) হয়। এ এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা, মহেন্দ্রনাথের মত যোগীপুরুষ আমাদের শিখিয়েছেন। স্নায়ুতন্ত্রকে তিনি সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দিয়েছেন। স্নায়ুতন্ত্র সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন যে স্নায়ুতন্ত্র গঠিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু দ্বারা। এদের মধ্যে বিইভিন্ন কম্পন বা শক্তি চালিত হয়ে স্নায়ুর বিচিত্রতা, গ্রেডেশন বা দিভিশন সম্ভব হয়। ের মধ্যে অনেক স্নায়ু থাকে সুপ্ত সেগুলোকে যোগদ্বারা প্রয়োজন মত সজীব করা সম্ভব হয়। এখানে তিনি উদাহরণ স্বরূপ ইংল্যান্ডে স্বামীজীর সাথে থাকাকালীন একদিনে ঘটনা সম্বন্ধে বলেছেন। স্বামীজী একবার যোগ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এক সভায় বলেছেন “দেখ তোমাদের যদি প্রশ্ন থাকে তাহলে লিখে যে যার পকেটে রেখে দাও।” কথামত উপস্থিত দর্শকমন্ডলী প্রশ্ন লিখে যে যার পকেটে রেখেছিলেন। এর পর স্বামীজী পকেটের মধ্যে রাখা একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন। সবাই আশ্চর্য্য হয়ে এই ঘটনার সম্ভাব্য ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, “এ আর কিছুই নয়। মানুষের দৃষ্টি শক্তির পিছনে যে অপটিক নার্ভ সেই নার্ভের মধ্যে আবার কতগুলি সূক্ষ্ম নার্ভ থাকে সুপ্ত। এই নার্ভগুলিকে সচল করতে হলে কিছু যৌগিক ক্রিয়ার দরকার হয় এবং সেই যৌগিক ক্রিইয়ার ফলেই আপনাদের পকেটে কি প্রশ্ন লিখে রেখেছেন তা আমি সূক্ষ্ম দৃষ্টি শক্তি দিয়ে দেখতে পেয়েছি।” মহেন্দ্রনাথ বলেছেন ভারতীয় বৈজ্ঞানিকেরা বলেন যে এই সুপ্ত নার্ভগুলিকে যৌগিক ক্রিয়ায় বা চেষ্টায় আবার সচল করে তলা সম্ভব হয়। তাঁর মতে পাশ্চাত্য জীব-বিজ্ঞানীদের মত ভারতীয় জীব-বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্ককে স্নায়ুর এক্মাত্র চালক বলে মনে করেন না। তাঁদের জীবন বিজ্ঞান বলছে ব্রেনকে বা মস্তিষ্ককে সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রের চালক। এখানেই তাঁদের সাথে আমাদের যোগবিজ্ঞানীদের পার্থক্য। ব্রেন ছাড়াও আমাদের স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে যে বিভিন্ন স্তর বা প্লেন (plane) বা কর্ড তাতে থাকে এক একটি কেন্দ্র। সেগুলি আমাদের স্পাইনাল কর্ডের শেষ প্রান্ত থেকে যতই উপরে যাচ্ছে ততই এক একটি স্তর পেরিয়ে ব্রেনে গিয়ে পৌঁচেছে। এই প্রত্যেকটি স্তর কিছুটা স্বাধীন বা কিছুটা নিজেরাই কাজ করতে পারে অর্থাৎ স্বয়ংক্রিয় বলা যেতে পারে। আমাদের ডাক্তারী শাস্ত্রে অটোনমিক নার্ভাস সিস্টেম বলা হয়েছে। সেটা ব্রেনের পরিচালনা ছাড়াও কিছুটা কাজ করতে পারে। এগুলো স্পাইনাল কর্ডের মধ্যে থাকে। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক এই ধরনের বুঝিয়ে দেওয়ার মত ব্যাপার নয়। মহেন্দ্রনাথ বলেছেন ভারতীয় যোগবিজ্ঞানীরা স্নায়ুতন্ত্রকে স্থূল ও সূক্ষ্ম শরীর, কারণ শরীর, মহাকারণ শরীর রূপে ভাগ করেছে। চিন্তাধারা যখন স্বাভাবিক জৈবিক কাজের জন্য থাকে তখন তাকে বলা হয় “কামলোক”। যেখানে আমাদের কল্পনা শক্তি প্রকাশ পাচ্ছে তাকে বলা হয় “রূপলোক”। “ভাবলোকে” আমরা নতুন নতুন ভাবের সন্ধান পাই। তারপর আসছে “জ্ঞানলোক”। জ্ঞান বিভিন্ন নলেজ বিভিন্ন, জ্ঞানের চিন্তাধারার জন্যই সেইলোক। এরপর আসছে “আনন্দলোক”, চিন্তাধারা আনন্দস্বরূপ ঘনীভূত ধারায় মিলিত হবার চেষ্টা করছে।


মহেন্দ্রনাথ তাঁর প্রবন্ধে আরও অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন ক্রমান্তর মানুষ ও প্রাণীর ভাষা, উদ্ভিদ জগৎ ইত্যাদি। তাঁর ছিল বিজ্ঞানধর্মী মন, যা তাকে সাহায্য করেছিল অনেক কিছু জানতে এবং লক্ষ্য করতে। তিনি সবকিছু পর্যালোচনা করেছিলেন বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে। একাধারে প্রাণীবিদ্যা, যোগতত্ত্ব, শরীরতত্ত্ব, মনস্তত্ত্ব, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি নান বিষয়ে এত জ্ঞান খুব কমই দেখা যায়।


Mohendra Nath Dutta
Mohendra Nath Dutta

শিক্ষাপ্রসঙ্গে মহেন্দ্র চিন্তা

দেবকুমার মুখোপাধ্যায়

 

‘শিক্ষা’ বা Education সম্বন্ধে আলোচনা করতে গেলেই- তিনটি বিষয় আমাদের সন্মুখে থাকে, যথা- ছাত্র, শিক্ষক ও গ্রন্থ। মহেন্দ্রনাথ বিভিন্ন গ্রন্থে, বিশেষত Lectures on Education গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু এই প্রবন্ধে ‘শিক্ষা’ বিষয়ের মূল ভাব প্রতিস্থাপন করা হল। ছাত্রের উন্নতির প্রধান পথ হল শ্রদ্ধা। “শ্রদ্ধাই হইল উচ্চমার্গে যাইবার প্রথম দ্বার বা রাজপথ। গুরু [শিক্ষক] শিষ্য [ছাত্র] কে সব ভাব দিতে পারেন কিন্তু শ্রদ্ধা দিতে পারেন না।” ‘ইহা হইল ব্যক্তির নিজস্ব গুন। ইহা উচ্চ জীবন লাভের উপাদান।’ ‘আপনি কৃপা করে শ্রাদ্ধাটা দিয়ে দিন- এই রকম বচন কেবল কুড়েমির লক্ষণ।’ ভিতরে একটা ওজোভাব থাকা আবশ্যক, তাহা হইলে গুরুর [শিক্ষকের] উপদেশ প্রতিফলিত হইতে পারে। ‘আত্মবোধ, আত্মবিকাশ ও আত্ম-সম্প্রসারণই হইল মানুষ তৈয়ারীর উপাদান। সমস্ত জগতে আত্মপ্রতিষ্ঠা Self-Assertion এর এই নতুন ভাব দেওয়া সম্বন্ধে অনেক কিছু চিন্তা করিবার আছে।’ আত্মতিষ্ঠ হইবার বা আত্মবিকাশ করিবার প্রচেষ্টা ‘অহংকার’ প্রসূত নয়, ‘অহংজ্ঞান’। দ্বিতীয় গুন- “ভাবতরঙ্গ আসলে উহার বেগ ধারন করিয়া নিজের ব্যক্তিত্ব, নিজের অস্তিত্ব সমান ভাবে বজায় রাখিতে হইবে।” ইহার জন্য ‘স্বাভাবিক দৃঢ় চিত্ততা, স্থির প্রতিজ্ঞ ভাব এবং ব্যক্তিত্ব অক্ষুন্ন রাখিতে হইবে। অধিকাংশ লোকই ভাবতরঙ্গে অভিভূত হইয়া ভাবসমুদ্রে নিমজ্জিত হইয়া যায় অর্থাৎ নিজের ব্যক্তিত্ব হারাইয়া থাকে। ইহা হইল একটি শিক্ষণীয় বিষয়’। তর্ক বিতর্ক প্রত্যেক ভাবের “নানা শাখা ও ব্যাপক অর্থ উপলব্ধি করিবার চেষ্টা” করিতে হইবে। “কোন ভাবই প্রথমেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞা করিয়া ফেলিয়া” দিলে চলিবে না। ‘গ্রন্থ’ সম্বন্ধে মহেন্দ্রনাথ বলেছেন- “গ্রন্থ হইতেছে দূরস্থিত শিক্ষকের প্রতিনিধি”। এই ‘গ্রন্থ’ অধ্যয়ন বিষয়ে তাঁর মত- “অধ্যয়ন তিন প্রকার- অধম শ্রেণীর অধ্যয়ন ভাষাজ্ঞান ও দু’চারটি কথা শিক্ষা করা” ইহাতে শ্রদ্ধার ভাব কিছু থাকে না, বস্তুজ্ঞানও হয় না। এই রূপ গ্রন্থ পাঠে “কয়েকটি উক্তি উচ্চারণ বা উদ্ধারণ” করা যায় কিন্তু “বিদ্যার সার্থকতা কিছুই” বোঝা যায় না। “মধ্যম শ্রেণীর অধ্যয়ন হইল, শ্রদ্ধা করিয়া শিক্ষকের সন্মুখে যাওয়া, ভক্তি করিয়া তাহার উপদেশ গ্রহণ করা”। ইহাতে “শ্রদ্ধার ভাব জাগরিত হয়, বর্ণিত ভাবসমূহের যেসার্থকতা আছে, তাহাও উপলবদ্ধি হয়।” “কিন্তু উত্তম শ্রণীর অধ্যয়নের উদ্দেশ্য হইল, ভাব সকল প্রত্যক্ষ দর্শন করা। ইহা হইল এক প্রকার ধ্যান। ভাব সকলকে ধ্যেয় বস্তু করিয়া ইহাদের প্রত্যক্ষ দর্শন করা হইল এই অধ্যয়নের উদ্দেশ্য। এইরূপ ধ্যান করিলে নিজের শরীর, স্থান ও সময়ের বিষয় আর কিছুই স্মরণ থাকে না, ....কেবল ভাবসমূহ প্রত্যক্ষ হইয়া সামনে দাঁড়ায় সেই হইল শ্রেষ্ঠ প্রকারের অধয়ন!”


শিক্ষককে শিক্ষাদানের সম্বন্ধে গুরুর কর্তব্য সম্বন্ধে মহেন্দ্রনাথ বলেছেন- “গুরুগিরির গম্ভীর চালে লোককে উপদেশ” দিলে “শ্রোতা ত্রস্ত ও বিষন্ন হইয়া পড়ে, বাক্যসমূহ সেরূপ হৃদয়সঙ্গম করিতে পারে না। কিন্তু প্রণালী হইতেছে, ভালবাসা, স্নেহের ভিতর দিয়া কথা বলা, হাস্যকৌতুকের ভিতর দিয়া কথা কওয়া জটিল প্রশ্ন সকল যেন অতি সামান্য কৌতুকের বিষয় বলিয়া দেখান, ইহা হইল প্রকৃত উপাদেষ্টার এক বিশেষ লক্ষণ। অপর একটি বিশেষ লক্ষণ উপদেষ্টা কখনও নিজের প্রাধান্য রাখিবে না- নিজে যেন অন্তরালে ও নিভৃতে থাকিবে, কিন্তু সংঘ ও সংঘের ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিবে।”

 

আমাদের দেশে শিক্ষা বা চেতনার প্রতিবন্ধকতার বিষয় মহেন্দ্রনাথের মতঃ “প্রত্যেক মানুষের ভিতরই ব্রহ্ম শক্তি আছে; কেবল পথ পাইতেছে না বলে সে উঠিতে পারিতেছে না। সহস্র সহস্র ব্যক্তি হীনকূলে জন্মগ্রহণ করিয়াছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা প্রতিকূল বলিয়া তাহারা হতাশ ও বিষন্ন হইয়া জীবনযাপন করিতেছে। জাতির ভিতর একটা রব উঠিয়াছে, তুই কিছু নয়, তুই অপদার্থ, তুই হীন, তুই জগতের কিছু করতে পারবি না, তোর জন্মটাই ব্যর্থ। এইরূপ উক্তি সমস্ত জাতিটাকে হীন ও নিস্তেজ করিয়া ফেলিয়াছে।” এহেন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মহেন্দ্রনাথ বলেছেনঃ “জন সমাজে ওজস্বিভাব, ঋষিভাব ও দেবভাব জাগ্রত করিয়া দিবে। ইহাতে বহু জীবন ও জাতি সতেজ ও শক্তিশালী হইয়া উঠিবে।”

 

পুণ্যদর্শন মহেন্দ্রনাথ দত্তের গ্রন্থাবলী প্রসঙ্গে গুণীজনের অভিমত

p£j¡ jS¥jc¡l

 

আত্মপ্রচার বিমুখ দার্শনিক মহেন্দ্রনাথ নিজ জীবন কাহিনী বিবৃত করেননি, তাঁর সম্পূর্ণ জীবন বৃত্তান্ত জানা সম্ভব নয়! তাঁর রচনাবলীই তাঁর প্রাণময় জীবন যা যুগে যুগে প্রাণ সঞ্চার করবে সুধী পাঠক বর্গকে। সেই জন্য মহেন্দ্রনাথ সম্বন্ধে সুবিখ্যাত জ্ঞানী-গুনীজনের কয়েকটি নির্বাচিত মন্তব্যের পরিচয় দেওয়া সমীচিন বলে মনে করি।

বিশ্ববিখ্যাত মনীষী রম্যাঁ রল্যাঁ মহেন্দ্রনাথের “Energy” নামক গ্রন্থ হাতে পেয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে এক পত্রে(May,14th 1933, Villa, OlagVillenuve)লিখেছিলেনঃ

“I...send my warm thanks and express my appreciation of your striking study and interpretation of the great problem of Energy.”

জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ ও রাজযোগ এই প্রসঙ্গে মনীষী রম্যাঁ রল্যাঁ আলোচনা করে মহেন্দ্রনাথ দত্তের “Dissertation on Painting”গ্রন্থের বিষয়ে বলেছেনঃ

“It is not that a real Yoga of art does not exist in India. And here Vivekananda’s own brother, Mohendranath Dutta, a profound thinker has filled in the lines indicated by the Master...The great Indian religious artist places himself face to face with the object he wishes to represent in the attitude ofa ‘Yogi’in the search of Truth: to him the object becomes the subject and the process of contemplation is of the strictest Yogic discrimination.”


মহেন্দ্রনাথের বন্ধু শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর “Dissertation on Painting” গ্রন্থের ভূমিকায় জানানঃ “আমার বন্ধুপ্রবর শ্রীযুক্ত মহেন্দ্রনাথ দত্ত এবং আমার পরম স্নেহস্পদ শিল্পী শ্রীমান নন্দলাল বসু ও শ্রীমান শৈলেন্দ্রনাথ দে এঁরা তিনজনে মিলিত হয়ে বুহুদিন ধরে শিল্প সম্বন্ধে যেসব আলোচনা ও গবেষণা করেছেন, গ্রন্থকার এই পুস্তকে সেই সমস্ত চিন্তা ও তর্ক-বিতর্ক একত্র করে আমাদের ও বিদেশের শিল্পার্থিগণকে অর্পণ করেছেন। গ্রন্থকার বহুদিন ধরে সারা পৃথিবী পর্যটন করে, নানা দেশের শিল্পসভ্যতা ইত্যাদির প্রাচীন ও আধুনিক হালচাল লক্ষ্য করে এবং স্বয়ং নিজ সাধনাবলে শিল্পসম্বন্ধে ভুয়দর্শন লাভ করেছেন, সুতরাং এই পুস্তক সর্বজনে সর্বদেশে আদর পাবে।”

শিল্পী নন্দলাল বসু মহেন্দ্রনাথের শিল্পতত্ত্বের জ্ঞান সম্বন্ধে মন্তব্য করেছিলেন- “ঠাকুরের বহুভক্ত ও মণীষী শিল্পীদের সঙ্গে শিল্প বিষয়ে আমার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পুণ্যদর্শনের মতো নিজে শিল্পী না হয়েও শিল্পের গভীর ও গূঢ় তত্ত্ব বোঝেন এমন লোক দেখি নাই।”

Dissertation on Painting” সম্বন্ধে তিনি লিখেছেনঃ “এইরূপ শিল্প সম্বন্ধে আলোচনা খুব কমই হয়েছে। এতে খুব গভীর চিন্তাপূর্ণ লেখা আছে। ভারতবর্ষে শিল্প বিষয়ে এরূপ গ্রন্থ বিরল।”


Hindu Organ’ পত্রিকায় মহেন্দ্রনাথ প্রণীত “Energy” গ্রন্থের উৎকর্ষ উপলব্ধি করে অভিমত প্রকাশিত হয়েছিলঃ

...The author writes with a freshness that comes from deep contemplation and his unique attempt to explain the theory of continuity of one all pervading energy in all beings and things in a scientific and logical way is befitting only of a profound scholar’s encyclopaedic knowledge. He explains the most complex problem of the Vedanta philosophy by observing in his inimitable way . . . , . . . Whatever we can think or conceive is a mere form of energy. The author supports . The author supports Yoga philosophy. ”

শ্রীরামকৃষ্ণদেব (SRI RAMAKRISHNA) এবং তাঁর পার্ষদের জীবন কাহিনী ও ইতিহাস বিষয়ে বহু গ্রন্থই প্রনয়ন করছেন- তবে এ সমস্ত কাহিনী শুধু মাত্র জীবন-পঞ্জিকা নয়, তাই মহেন্দ্রনাথ লিখিত, “ব্রহ্মানন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশন” গ্রন্থ সম্বন্ধে “উদ্বোধন” পত্রিকা যথার্থই বলেছেনঃ

“...ভক্তের দৃষ্টি যেখানে কেবল লীলাবিলাস দেখিতেই ব্যস্ত, সেখানে লেখক আপনার ভক্তিকে প্রাধান্য না দিয়া বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে মহৎ জীবনের ক্রমবিকাশের বৈশিষ্ট্যটুকু বুঝিতে চাহিয়াছেন।”


পুণ্যদর্শন মহেন্দ্রনাথ দত্ত শ্রীরামকৃষ্ণদেবের (SRI RAMAKRISHNA) জীবন, সাধনা ও তাঁর কার্য্যাবলী বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে অনুধাবন করে ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (SRI RAMAKRISHNA) অনুধ্যান’ গ্রন্থ প্রণয়ন করেন । বিচারপতি শঙ্করপ্রসাদ মিত্র ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (SRI RAMAKRISHNA) অনুধ্যান’ গ্রন্থ সম্বন্ধে বলেছেনঃ

“-Since MohendranathDutt has presented Sri Ramakrishna with a novelty and originality of approach perhaps acceptable to modern mind, it is necessary that his views should receive wide publicity. MohendraNath’s theory on material and subtler nerves and manifestation of mental faculties thorough different types of nerve may not yet been established by scientific discovers or experimented upon in laboratories or science; ...and what Mohendranathclaimsto be a part of science may one-day be accepted by scientist all over the globe.


‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ (SRI RAMAKRISHNA) অনুধ্যান’ গ্রন্থ বিষয় সাপ্তাহিক বর্তমান (৭ই ডিসেম্বর ১৯৯১) যথার্থই মন্তব্য করেছেনঃ “.....নরেন দত্তর ভাই হিসাবে মহেন্দ্রনাথ পরিচিতি লাভ করতে চাননি। তিনি নিজস্ব ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে আস্থাবান ছিলেন। তিনি নিজের চখেই বিশ্বব্যাপার দেখেছেন- দাদার চোখ দিয়ে নয়....তার অনুভব ও উপলব্ধির জগৎটাও ছিল স্বতন্ত্র। অধুনিক যুগে দুনিয়া জুড়ে মননশীলতার যে তীব্র স্রোত বইছে- মহেন্দ্রনাথ তা’তে ডুব দিয়েছিলেন। ডুব দিয়ে দু’হাত ভরে মণি রত্ন তুলে এনেছেন। ....গ্রাম্য ভক্তির গদগদ ভাব তাঁর রচনায় নেই। তাঁর বিচার শক্তিকে আচ্ছন্ন হতে দেননি। আপ্ত বাক্য তিনি লেখেননি। মহেন্দ্রনাথের কৃতিত্ব এই যে তিনি তথ্য ও যুক্তির সাহায্যে তাঁর ধারনাকে স্পষ্ট করেছেন, আচমকা মন্তব্য করেননি।”


Bharat Prative (Spring No.1987) পত্রিকাতে Dr. R.K. Sing-এর মন্তব্যের অংশবিশেষ ‘Reflection on Sri Sri Ramakrishna’ এবং ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের (SRI RAMAKRISHNA) অনুধ্যান’ গ্রন্থ দ্বয়ের সম্যক পরিচয় বহন করেঃ

“....Dutta’s reflection on the life and teaching of Sri Sri Ramakrishna Paramahansa are processed through his own spiritual and philosophical vision characterised by synthesis and unification. His book is remarkable as an introspective narration of Sri Sri Ramakrishna’s life and activities....In the second part MohendrNath Dutta provides a philosophical [Raj Yoga] perspective to the activities and views of Sri Ramakrishna Paramahansa to appreciate the extraordinary in him ....And tries to explain them rationally in terms of the activities of the particular nerves....And all knowledge sensuous or supra sensuous is experienced through the vibrations of nerves.... the last four pages are a plea for appreciating philosophically and mathematically the mental traits and the activities of the two great souls [Ramakrishna & Swami Vivekananda] whose messages still need dispassionate analysis and evaluation for peace on the Earth. Dutta’s book is quite interesting just as Dr. Basu’s translation should be a good addition to Sri Ramakrishna literature in English.


মহেন্দ্রনাথের সুবিখ্যাত ভ্রমণ ইতিহাস- “প্যালেস্টাইন ভ্রমণ ও ইহুদী জাতির ইতিহাস” গ্রন্থের মূল্যায়ণ করে আনন্দবাজার পত্রিকা মন্তব্য করেছেনঃ

“....মহেন্দ্রনাথের পদযুগলের ক্লান্তি ছিল না। মন আর চোখও ছিল ক্লান্তিহীন। তিনি ফা-হিয়েন, ইবনবতুতা প্রভৃতি ঐতিহাসিক ভ্রমণকারীদের সগোত্র। আমরা এঁদের চোখ দিয়ে মানুষের ইতিহাস পর্যবেক্ষ্ণ করি।”


বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রীপান্থ মহেন্দ্রনাথের লেখা “কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা” গ্রথ সম্বন্ধে অভিমত প্রকাশ করেনঃ

“....পাতায় পাতায় অনেক রকম খুচরো খবর। প্রত্যেকটি খবর উপাদেয় এবং এই কলিকাতা শহরের ইতিহাসের নেশাগ্রসস্থদের পক্ষে মূল্যবানও বটে।....এর কাছে কোথায় লাগে তথাকথিত তথ্যসমৃদ্ধ পৃথুল ইতিহাস। টুকরো কথার এই মুক্তো মালাটির নাম ‘কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা’।”

মহেন্দ্রনাথ সমাজদর্শন, অর্থনীতি প্রমুখ বিবিধ বইয়ের বিশদ আলোচনা না করে ProbuddhoBahrat (May 1970 issue)-তে মহেন্দ্রনাথ প্রণীত National wealthগ্রন্থের সম্বন্ধে প্রকাশিত রিভিউ-এর অংশ বিশেষ আমরা উদ্ধৃত করছিঃ

“....The topic discussed are varied such as capital, wealth, monopoly, profit, wages, agriculture, industry, and so on. They are mainly concerned with the problem of national planning in a co-ordinated and constructive sense in keeping with the ideals of the nation eith great past and great future. In his treatment of the economic problems there is a touch of Ruskin and liberality that is not to be expected of classical economists; the economic planning of Sri Dutt is based rather on the traditional values of this country and its culture.

মহাজাগতিক বিবর্তন সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গীতে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন মহেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘Cosmic Evolution’  গ্রন্থে।

Probuddha Bharat পত্রিকায় Dr. P. N. Mukherjee এই গ্রন্থের সম্যক পরিচয় দিয়েছেন- “...The topics dealt re among others energy, atoms light, orbs, motion, earth, ego, human species, animal species and so on. Absturse subjects like the creation of different species from primal energy and a rational approach to eorrelate it with scientific explanation acceptable to modern minds,  are the distinctive quality of this book....the book is a gem and worth its weight in gold.

মহেন্দ্রনাথের রচিত ‘Lecture on Philosophy’ গ্রন্থ অনুধাবন করে Presidency College-এর দর্শন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ডঃ নীরদবরণ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন-

“আমরা সাধারনত দর্শনের গ্রন্থে যে আলোচনা পাই এই গ্রন্থের আলোচনা সেই জাতীয় নয়। যাঁরা তত্ত্বজিজ্ঞাসু এবং সত্য দর্শনের অভিলাষী তাঁরাই এই গ্রন্থ পাঠে উপকৃত ও আনন্দিত হবেন।”

Indian National Library-র অভিজ্ঞ গ্রন্থ পঞ্জিকারক শ্রীসুনীলবিহারী ঘোষ যথার্থই মন্তব্য করেছেনঃ “বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই ধরনের মনীষী কেবল দূর্ল্ভ নয়, ব্যতিক্রম।”

পুণ্যদর্শন মহেন্দ্রনাথ দত্তের জন্মশতবার্ষিকী সভার (আগস্ট ১৯৬৮) বিচারপতি প্রশান্তবিহারী মুখোপাধ্যায় নিম্ন মন্তব্যই সংক্ষেপে মহেন্দ্র রচনাবলীর পূর্ণ পরিচয় বহন করেঃ

“...এমন বিষয় ছিল না যা তিনি জানতেন না। এমন বিষয় ছিল না যা তিনি লেখেননি।”





Mohendra Nath Dutta






মনীষী মহেন্দ্রনাথ দত্তের গ্রন্থাবলী

(ক) ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ক পুস্তক :

1. Natural Religion     

2. Mind 

3.Mentation 

4. Theory of Vibration

5. Cosmic Evolution (Part I & Part II)

6. Triangle of Love     

7. Formation of the Earth

8.Metaphysics     

9.Theory of Motion    

10. Biology          

11.Logic of Possibilities

12. Devotion

13.Ego   

14. Theory of Sound  

15. Theory of Light     

16. Energy

17. Thoughts on Religion  

18.Lectures on Philosophy

19. Action

(খ) কলা ও ভাস্কর্য্য বিদ্যা বিষয়ক পুস্তক :

1. Dissertation on Planting

2. Principles of Arcbitecture

(গ) সাহিত্য, ভাষাতত্ত্ব, সমালোচনা ও মহাকাব্য বিষয়ক পুস্তক :

1. Apprecaition of Michael Madhusudan and DinobandhuMitra      

2. Nala and Damayanti

3. Kurukshetra     

4. Language and Grammar and Rhetoric

5. Dissertation on Poetry.

(ঘ) নীতিশাস্ত্র, শিক্ষা, সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, নারী প্রগতি বিষয়ক পুস্তক : :

1. Lecturess on Status of Toilers.     

2. Homocentric Civilization

3. Reflections on Society

4. Federated Asia   

5. National Wealth     

6. Nation      

7. New Asia  

8. Toilers Republic

9. Society     

10. Ethics     

11. Temples and Religious Endowment  

12. Social Thoughts

13. Rights of Mankind

14. Lecture on Education   

15. Status of Women 

16. Reflections on women

17. Society & Education and Society & Women.

বাংলা গ্রন্থঃ-

(ঙ) অনুধ্যান, ভ্রমণ, সাহিত্য, মনস্তত্ত্ব, দর্শন প্রভৃতি : :

১। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের (SRI RAMAKRISHNA) অনুধ্যান

২। লন্ডনে স্বামী বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA)(৩ খণ্ডে)

৩। শ্রীমৎ বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA) স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী

৪। শ্রীমৎ সারদানন্দ স্বামীজীর জীবনের ঘটনাবলী

৫। স্বামী বিবেকানন্দের (SWAMI VIVEKANANDA) বাল্যজীবনী

৬। কাশীধামে স্বামী বিবেকানন্দ (SWAMI VIVEKANANDA)

৭। ব্রহ্মানন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশন

৮। গুরুপ্রাণ রামচন্দ্রের অনুধ্যান

৯। দীনমহারাজ

১০। সাধু চতুষ্টয় (সারদেশ্বরী আশ্রম থেকে প্রকাশিত)

১১। ব্রজধাম দর্শন

১২। বদরীনারায়নের পথে

১৩। নিত্য ও লীলা (বৈষ্ণব দর্শন)

১৪। মায়াবতীর পথে

১৫। তাপস লাটু মহারাজের অনুধ্যান

১৬। মহাপুরুষ শ্রীমৎ স্বামী শিবানন্দ মহারাজের অনুধ্যান

১৭। অজাতশত্রু শ্রীমৎ স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজের অনুধ্যান

১৮। ভক্ত দেবেন্দ্রনাথ

১৯। শ্রীমৎ স্বামী নিশ্চয়ানন্দের অনুধ্যান

২০। গুপ্ত মহারাজ

২১। জে, জে, গুডউইন(স্বামীজীর ক্ষিপ্রলিপিকার)

২২। মাতৃদ্বয় (গৌরী মা ও গোপালের মা)

২৩। মাস্টারমহাশয় (শ্রীম)

২৪। খেলাধূলা ও প্ললী সংস্কার।;

(চ) কাব্য, সমালোচনা, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, শিল্প প্রভৃতি পুস্তক::

১। বৃহন্নলা (কাব্য)

২। পাশুপত অস্ত্রলাভ (কাব্য)

৩। দৌত্য কার্য (কাব্য)

৪। ঊষা ও অনিরুদ্ধ

৫। বাংলাভাষার প্রধাবণ

৬। গিরিশ্চন্দ্রের মন ও শিল্প (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত)

৭। শিল্প প্রসঙ্গ

৮। সঙ্গীতের রূপ

৯। নৃত্যকলা

১০। বিবিধ কবিতাবলী

১১। কাব্য অনুশীলন

১২। প্রাচীন ভারতের সংশ্লিষ্ট কাহিনী

১৩। কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা

১৪। প্রাচীন জাতির দেবতা ও বাহনবাদ

১৫। প্যালেস্টাইন ভ্রমণ কাহিনী ও ইহুদী জাতির ইতিহাস।




Mohendra Nath Dutta

লক্ষ্যহীন ভ্রমি ধরা মাঝে

উত্তাল তরঙ্গ রাশি-

গ্রাসিছে জগৎ।

হাহাকার সদা উঠে রোল।

মর্ম্ম ভেদী পশিছে

হৃদয় মাঝে,

নাহিক নিস্তার !

কে আছ মানব

নিবার তরঙ্গরাজি ।

পুণ্যদর্শন মহেন্দ্রনাথ দত্ত

 

PRAYER

Oh ! Mighty Mind, my preceptor,
The Soul of my sole!
Let me have faith in thee,
Not hither and thither to roll.
The shaky mind of mine
Be strong and straight in view;
Bestow thy blessings on me
To visualize the truth through you.

Shyamapada Pal

প্রাপ্তিস্থান

All the books of Sri MohendraNath Dutta are published by The Mohendra Publishing Committee, 36/7 SahityaParishad Street, Kolkata-700006.The same are also found to be available in the following showrooms/ shops:-

1.      Ramkrishna Mission Swami Vivekananda’s Ancestral House and Cultural Centre

3, Gourmohan Mukherjee Street

Kolkata-7oooo6

2.      Udbodhan

Baghbazar, 1 No Udbodhan Lane, Baghbazar, Kolkata-700003

3.      Ramkrishna MathYogodyan

Kankurgachi,Kolkata,700054

4.      Ramkrishna Math And Mission

Belur,Thada, Howrah

West Bengal-711202

5.      Some other branches of Ramkrishna Math & Mission&

Book shops at college street like Dasgupta& co, 54/3 college st , Kolkata 700073 etc.

Thanks to the TheMohendra Publishing Committee. They have extended all cooperation & help in formation of this site. All the information is from the books published by them.

The site is in the memory of Sri Ranjit Kumar Ghosh- disciple of Sri MohendraNath Dutta.

Powered By: ardentwebmedia
up